
পরিবেশ রসায়ন-৫, রসায়ন ২য় পত্র
উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন ২য় পত্র
অধ্যায় : ১(পরিবেশ রসায়ন)
লেকচার-৫
পাঠের বিষয় : অম্ল-ক্ষার সম্পর্কে অ্যারহেনিয়াস মতবাদ, অম্ল-ক্ষারক সম্পর্কে ব্রনস্টেড-লাউরি মতবাদ বা প্রোটনীয় মতবাদ, অম্ল ও ক্ষারক সম্পর্কে লুই মতবাদ, অনুবন্ধী এসিড ও অনুবন্ধী ক্ষারক, এসিড বৃষ্টি ও এর প্রভাব, উভধর্মী পদার্থ ।
১. অম্ল ও ক্ষারক সম্পর্কিত অ্যারহেনিয়াস মতবাদ আলোচনা কর।
উ : অ্যারহেনিয়াস মতবাদ অনুসারে,অম্ল হচ্ছে সে সব হাউড্রোজেন যুক্ত যৌগ যারা জলীয় দ্রবনে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) দান করে। অপরদিকে ক্ষারক হচ্ছে সে সব হাউড্রক্সি যৌগ, যারা জলীয় দ্রবনে হাউড্রোক্সিল আয়ন (OH– ) দান করে।
উদাহরন :
২. অম্ল-ক্ষারক সম্পর্কে ব্রনস্টেড-লাউরি মতবাদ বা প্রোটনীয় মতবাদ ব্যাখ্যা কর।
ব্রনস্টেড লাডরির প্রোটনীয় মতবাদ অনুসারে, অম্ল হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা প্রোটন প্রদানে সক্ষম। অপরদিকে ক্ষারক, হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা প্রোটন গ্রহণে সক্ষম।
উদাহরন :
৩. অম্ল ও ক্ষারক সম্পর্কে লুই মতবাদ আলোচনা কর।
লুই মতবাদ অনুসারে, একজোড়া ইলেকট্রন গ্রহনে সক্ষম পদার্থকে অম্ল এবং একজোড়া ইলেকট্রন প্রদানে সক্ষম পদার্থকে ক্ষারক বলে।
উদাহরন,
৪. অনুবন্ধী এসিড ও অনুবন্ধী ক্ষারক বলতে কী বুঝ ?
অনুবন্ধী এসিড : কোন ক্ষারকের সঙ্গে একটি প্রোটন সংযোগের ফলে যে এসিড পাওয়া যায় তাকে ঐ ক্ষারকের অনুবন্ধী এসিড বলে।
অনুবন্ধী ক্ষারক : কোন এসিড হতে একটি প্রোটন অপসারনের ফলে যে ক্ষারক পাওয়া যায় তাকে ঐ এসিডের অনুবন্ধী ক্ষারক বলে।
৫. এসিড বৃষ্টি কী ? এর কারন ও প্রভাব ও প্রতিকার আলোচনা কর।
এসিড বৃষ্টি : যখন কোন অঞ্চলের বায়ুতে SO2, NO2 , বাষ্পীয় H2SO4 ইত্যাদির পরিমান বেশি থাকে তখন এগুলো বায়ুস্থ জলীয় বাষ্পের সাথে মিশ্রিত হয় এবং বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। এরূপ বৃষ্টিকেই এসিড বৃষ্টি বলে।
কারন : অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনই সাধারনত: এসিড বৃষ্টির মূল কারন।
এসিড বৃষ্টির প্রভাব :
এসিড বৃষ্টির ফলে পরিবেশের ব্যপক ক্ষতি সাধিত হয়। যেমন,
(১) পুকুর, বিল, হ্রদের পানির PH এর মান 7 থেকে কমে 3 পর্যন্ত হয়। এর ফলে জলাশয়ের মাছ ও জলজ উদ্ভিদ মরে যায়।
(২) বনভূমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এমনকি তা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
(৩) এসিড বৃষ্টির ফলে দালানকোঠা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
(৪) ধাতু দ্বারা নির্মিত সেতু, জাহাজ ও যানবাহন এসিড বৃষ্টিতে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।
(৫) এসিড বৃষ্টির ফলে মাটির pH 4.5 এর নিচে নেমে আসলে কৃষি জমির উর্বরতা কমে যায়।
প্রতিকার : পরিবেশের উপর এসিড বৃষ্টির ব্যাপক বিরূপ প্রভাবকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা যায়।
(১) ট্রিটমেন্ট প্লেন্ট : বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনি দিয়ে ক্ষতিকারক সালফারডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসসমূহ নির্গত হওয়ার আগে তাকে ফ্ল ু গ্যাস ডিসালফিউরাইজেশন (FGD) প্ল্যান্টে চুনাপাথর বা চুনের মধ্য দিয়ে চালনা করে সালফারডাই অক্সাইড গ্যাস শোষন করে রাখা হয়। এতে ক্ষতিকারক সালফারডাই অক্সাইড গ্যাস অপসারিত হয়।
(২) রিসাইক্লিং : শিল্প কারখানার বর্জ গ্যাস চিমনি দিয়ে পরিবেশে ছেড়ে না দিয়ে প্রক্রিয়াতে পুন:সঞ্চালন করে কাজে লাগানো হয়। এতে পরিবেশে অম্লধর্মী গ্যাসের পরিমান হ্রাস পায়। যেমন.
৬. তীব্র এসিডের অনুবন্ধী ক্ষারক দুর্বল কেন ?
এসিড যত তীব্র হয় তার প্রোটন ত্যাগের প্রবনতাও তত বেশি হয়। তীব্র এসিডের অধিকতর প্রোটন ত্যাগের প্রবনতার ফলে সৃষ্ট অনুবন্ধী ক্ষারকটির প্রোটন গ্রহনের প্রবনতাও তত অধিক হারে হ্রাস পায়। ফলে তীব্র এসিডটির অনুবন্ধী ক্ষারকটি দুর্বল প্রকৃতির হয়। যেমন HCl একটি তীব্র এসিড, কিন্তু এর অনুবন্ধী ক্ষারক Cl– একটি দুর্বল ক্ষারক।
৮. উভধর্মী পদার্থ কী ?
যে সকল পদার্থ এসিড ও ক্ষারক উভয় হিসেবে ক্রিয়া করে তাকে উভধর্মী পদার্থ বলে। যেমন, পানি একটি উভধর্মী পদার্থ- কারন ইহা প্রোটন দাতা এবং প্রোটন গ্রহিতা উভয় রূপে ক্রিয়া করে।
৯. NH3 কে লুইস ক্ষারক বলা হয় কেন?
লুই মতবাদ অনুসারে, একজোড়া ইলেকট্রন প্রদানে সক্ষম পদার্থকে ক্ষারক বলে।
উদাহরন,
যেহতু :NH3 একজোড়া ইলেকট্রন প্রদানে সক্ষম তাই ইহা একটি লুইস ক্ষারক।
১০. অনুবন্ধী এসিড-ক্ষারক যুগল বলতে কী বুঝ ?
কোন ক্ষারকের সঙ্গে একটি প্রোটন সংযোগের ফলে যে এসিড পাওয়া যায় তাকে ঐ ক্ষারকের অনুবন্ধী এসিড বলে। যেমন,
এখানে, NH4+ হলো NH3 এর অনুবন্ধী এসিড এবং NH4+ এবং NH3 এসিড-ক্ষারক যুগলকে অনুবন্ধী এসিড-ক্ষারক যুগল বলে।
১১. AlCl3 কে লুইস এসিড বলা হয় কেন?
লুই মতবাদ অনুসারে, একজোড়া ইলেকট্রন গ্রহনে সক্ষম পদার্থকে এসিড বলে। AlCl3 একটি লুইস এসিড, কারন- ইহা একজোড়া ইলেকট্রন গ্রহনে সক্ষম। যেমন,
উপরোক্ত বিক্রিয়ায় AlCl3 অনুস্থ কেন্দ্রীয় পরমানু Al, CH3Cl: এর ক্লোরিন পরমানু থেকে একজোড়া ইলেকট্রন গ্রহন করেছে। সুতরাং AlCl3 একটি লুইস এসিড ।
১২. কনজুগেট ক্ষারক বলতে কী বুঝ ?
কোন এসিড হতে একটি প্রোটন অপসারনের ফলে যে ক্ষারক পাওয়া যায় তাকে ঐ এসিডের কনজুগেট ক্ষারক বলে। যেমন,
এখানে, H2SO4 এর অনুবন্ধী ক্ষারক বা কনজুগেট ক্ষারক হলো HSO4– ।
১৩. HCO3– ব্রনস্টেড-লাউরী এসিড-ব্যাখ্যা কর।
ব্রনস্টেড লাডরির প্রোটনীয় মতবাদ অনুসারে, অম্ল হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা প্রোটন প্রদানে সক্ষম।
উদাহরন :
১৪. H2O একটি উভধর্মী পদার্থ - ব্যাখ্যা কর।
যে সকল পদার্থ এসিড ও ক্ষারক উভয় হিসেবে ক্রিয়া করে তাকে উভধর্মী পদার্থ বলে। যেমন, পানি একটি উভধর্মী পদার্থ- কারন ইহা প্রোটন দাতা এবং প্রোটন গ্রহিতা উভয় রূপে ক্রিয়া করে।
A K M Ziaul Hasan
M Sc in Chemistry(1st class)
Assistant Professor,Department of Chemistry,
IDEAL COLLEGE,Dhanmondi, Dhaka
Gmail : Ziaul.hasan22@gmail.com
https://ziaulhasan.com
Mob. 01715-736525(7.0pm to 11.0pm)