
গুনগত রসায়ন-১ রসায়ন ১ম পত্র
উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন ১ম পত্র
অধ্যায়-২(গুনগত রসায়ন)
লেকচার নং-০১
পাঠের বিষয় : রাদারফোর্ডের আলফা কনা বিচ্ছুরন পরীক্ষা, রাদারফোর্ডের পরমানু মডেল, রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সফলতা,রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি, বোরের পরমানু মডেল, বোর পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা, বোর পরমাণু মডেল ও রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের তুলনা
১. রাদারফোর্ডের আলফা কনা বিচ্ছুরন পরীক্ষাটি বর্ননা কর ।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তৈজস্ক্রিয় উৎস হতে বিকিরিত দ্রুতগামী α কণিকাকে একটি অতি পাতলা স্বর্ণ পাতের উপর বিক্ষেপন করে লক্ষ করেন যে-
(১) অধিকাংশ α কণিকা স্বর্ণপাত ভেদ করে চলে যায়।
রাদারফোর্ডের আলফা কনা বিচ্ছুরন পরীক্ষা (2.06min)
(২) অল্প সংখ্যক α কণিকা বিকর্ষিত হয়ে বেকে দিক পরিবর্তন করে।
(৩) অত্যন্ত অল্প সংখ্যক α কণিকা (প্রায় ২০,০০০ ভাগের ১ ভাগ) পুরোপুরি বেকে ফিরে আসে।
পর্যবেক্ষণ : তিনি লক্ষ করেন যে,
(১) পরমাণুর অভ্যন্তরে অধিকাংশ স্থান ফাঁকা।
(২) α কণিকা যে অঞ্চল হতে বেঁকে দিক পরিবর্তন করে তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ধনাত্মক আধান যুক্ত বস্তু বিদ্যমান। রাদারফোর্ড এ ধনাত্মক বস্তুর নাম দেন নিউক্লিয়াস। তিনি আরও বলেন, নিউক্লিয়াসে বস্তুর সমস্ত ভর পুঞ্জিভূত থাকে।
(৩) পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং যা হাইড্রোজেন পরমানুর আয়তনের তুলনায় প্রায় ১ লক্ষ ভাগ ছোট।
২. রাদারফোর্ডের পরমানু মডেল বর্ননা কর।
১৯১১ সালে রাদারফোর্ড তাঁর বিখ্যাত α কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা দ্বারা পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কারের মাধ্যমেই একটি পরমাণুর নিউক্লিয় মডেল প্রস্তাব করেন। মডেলটি নিম্নরূপ :
১. পরমাণুর যে অংশটি ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট ও ভারী তা কেন্দ্রে অবস্থান করে। এটি নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত। নিউক্লিয়াসেই একটি পরমানুর প্রায় সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত থাকে।
(২) পরমাণু সামগ্রিকভাবে তড়িৎ-নিরপেক্ষ। নিউক্লিয়াসে যতগুলো ধনাত্মক কণা (প্রোটন) বিদ্যমান, ঠিক ততগুলো ঋনাত্মক কণা (ইলেকট্রন) এর চারপাশে অবস্থান করে।
(৩) পরমাণুর এই মডেল সৌরজগতের সাথে তুলনীয়। সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে গ্রহগুলো যেভাবে ঘুরে, ঠিক একইভাবে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে তীব্র বেগে ঘুরছে। ফলে নিউক্লিয়াস এবং ইলেকট্রনের মধ্যকার কেন্দ্রমুখী বল এবং ইলেকট্রনের কেন্দ্রবহির্মুখী বল পরস্পর সমান ও বিপরীতমুখী হয়। তাই পরমানু সুস্থিত হয়।
(৪) পরমানুর আকার বা আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াস অত্যন্ত ক্ষুদ্র।
৩. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সফলতা আলোচনা কর।
(১) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল যথেষ্ট সফলভাবে α কণিকা পরীক্ষাকে ব্যাখ্যা করে।
(২) পরমানুতে নিউক্লিয়াসের উপস্থিতির সঠিক ধারণা দেয়।
(৩) পরমানুর চার্জ নিরপেক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত ব্যাখ্যা দেয়।
৪. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি আলোচনা কর।
এ মডেলের ত্রুটিগুলো নিম্নরূপ -
(১) এ মডেলকে সোলার সিস্টেমের (Solar system) সাথে তুলনা করা হয়েছে। সৌরমন্ডলের গ্রহগুলো তড়িৎ নিরপেক্ষ, কিন্তু পরমানুতে ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন ও ঋনাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন বিদ্যমান এবং এদের মধ্যে আকর্ষণ ও বিকর্ষন আছে।
(২) ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত্ব অনুসারে কোন আধানযুক্ত কণা যখন বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করে তখন অনবরত শক্তি বিকিরণ করে।
নিরবচ্ছিন্নভাবে শক্তি হ্রাসের ফলে এরূপে ভ্রমণরত ইলেকট্রনের গতিশক্তি কমে যাবে এবং তার সর্পিলাকারের ঘূর্ণন পথের ব্যাসার্ধ কমতে কমতে এক সময়ে তা নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। ফলে এ মডেলের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
(৩) রাদারফোর্ডের পরমানু মডেলে ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি সম্পর্কে কোন ধারণা দেওয়া হয়নি।
(৪) বহু-ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কীভাবে পরিক্রমণ করে সে সম্পর্কে কোন উল্লেখ এ মডেলে নেই।
৫. বোরের পরমানু মডেল বর্ননা কর।
পরমাণুর গঠন ও একইসাথে পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যার জন্য নীলস বোর ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তার বিখ্যাত পরমানু মডেল প্রকাশ করেন। বোর পরমাণু মডেলের স্বীকার্যগুলো নিম্নরূপ :
(১) ইলেকট্রনের স্থির কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের ধারণা সম্পর্কীয় স্বীকার্য,
(২) ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ সম্পর্কীয় স্বীকার্য,
(৩) শক্তির শোষণ বা বিকিরণ এবং বর্ণালি সৃষ্টি সম্পর্কীয় স্বীকার্য,
প্রথম স্বীকার্য (ইলেকট্রনের স্থির কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের ধারণা সম্পর্কীয়) :
পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বাইরে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে কতিপয় নির্দিষ্ট শক্তির বৃত্তাকার কক্ষপথ আছে। এই কক্ষপথে ইলেকট্রনগুলো সর্বদাই নিউক্লিয়াসের চারদিকে আবর্তন করে । কক্ষপথগুলো নিউক্লিয়াস থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ।
ইলেকট্রনগুলো এসব বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তনকালে যতক্ষন তারা একই কক্ষপথে থাকবে ততক্ষন তারা কোন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করবে না। এই কক্ষপথগুলো স্থির কক্ষপথ বা শক্তিস্তর নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় স্বীকার্য (ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ সম্পর্কীয়) :
তৃতীয় স্বীকার্য (শক্তির শোষণ বা বিকিরণ এবং বর্ণালি সৃষ্টি সম্পকীয়) :
যখন কোন ইলেকট্রন একটি কক্ষপথ বা শক্তি স্তর হতে অন্য কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে লাফ দেয় তখন ইলেকট্রন দ্বারা নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি শোষিত বা বিকিরিত হয়।
ইলেকট্রন যদি নিম্ন শক্তি স্তর থেকে উচ্চতর শক্তি স্তরে লাফ দেয় বা উন্নীত হয় তখন ইলেকট্রন দ্বারা শক্তি শোষিত হয়। আবার যখন ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে লাফ দেয় বা নেমে আসে তখন ইলেকট্রন শক্তি বিকিরণ করে।
৬. বোর পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।
বোর পরমাণু মডেল আধুনিক পরমাণু মডেল হলেও এটিতে কিছু ত্রুটি বিদ্যমান। এ ত্রুটিগুলি নিম্নরূপ:
(১) বোর পরমাণু মডেল হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালি ব্যাখ্যা করতে পারলেও এর সাহায্যে বহু ইলেকট্রনবিশিষ্ট পরমাণুর বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায় না।
(২) বোর পরমাণু মডেল অনুসারে এক শক্তি স্তর হতে অপর শক্তি স্তরে ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটলে বর্ণালিতে একটি করে রেখা সৃষ্টি হওয়া উচিত। কিন্তু উচ্চ শক্তির বর্ণালি-বীক্ষণের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, প্রতিটি রেখার স্থানে কয়েকটি রেখা অবস্থান করে। এসব সূক্ষ রেখার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা বোর মডেল ব্যাখ্যা করতে পারে না।
(৩) এ তত্ত্ব প্রয়োগ করে জীম্যান ও স্টার্ক ফলাফলের ব্যাখ্যা করা যায় না।
(৪) বোর পরমাণু মডেল অনুসারে ইলেকট্রনের শুধুমাত্র কণা ধর্ম প্রদর্শন করে। কিন্তু দ্য-ব্রগলি প্রমান করেছেন, ইলেকট্রনের কণা ও তরঙ্গ উভয় ধর্ম রয়েছে।
৭. বোর মডেল ও রাদারফোর্ড মডেলের তুলনামূলক আলোচনা স্বাপেক্ষে কোনটিকে তুমি অধিক গ্রহনযোগ্য বলে মনে কর? বিশ্লেষন কর।
নিম্নে বোর পরমাণু মডেল ও রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের তুলনামূলক আলোচনা করা হল :
উপরোক্ত আলোচনা হতে সুস্পস্ট যে, রাদারফোর্ডের পরমানু মডেলের উল্লেখযোগ্য ত্রুটিগুলো বোর মডেলে সংশোধিত আকারে প্রস্তাবিত হয়েছে। উল্লেখিত আলোচনা-পর্যালোচনা স্বাপেক্ষে বোর মডেলকে রাদারফোর্ড মডেল অপেক্ষা অধিক গ্রহনযোগ্য বলে আমি মনে করি।
A K M Ziaul Hasan
M Sc in Chemistry(1st class)
Assistant Professor,Department of Chemistry,
IDEAL COLLEGE,Dhanmondi, Dhaka
Gmail : Ziaul.hasan22@gmail.com
https://ziaulhasan.com
Mob. 01715-736525(7.0pm to 11.0pm)