Preloader
img

গুনগত রসায়ন-৪ রসায়ন ১ম পত্র

উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন ১ম পত্র

অধ্যায়-২(গুনগত রসায়ন)

লেকচার-৪

বিষয় : 

রেডিয়েশনের কোয়ান্টাম তত্ব, তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরন, বিভিন্ন বিকিরন অঞ্চল,দৃশ্যমান আলোর তড়ঙ্গ পরসির, অতি বেগুনী রশ্মির ব্যবহার, প্রতিপ্রভা, ফ্লোরোসেন্স পদার্থ, হাইড্রোজেন বর্নালি

 

১.  রেডিয়েশনের কোয়ান্টাম তত্ত্ব (Quantum theory of radiation)  : 

  

১৯০১ খ্রীষ্টাব্দে বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাংক রেডিয়েশনের কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। 

এ তত্তানুসারে, “কোন বস্তু বিচ্ছিন্নভাবে এক নির্দিষ্ট পরিমান বা তার সরল গুনিতকের সমান শক্তি বিকিরন বা শোষন করে” শক্তির এ নির্দিষ্ট পরিমানকে কোয়ান্টাম বলে। 

এ কোয়ান্টাম শক্তি বিকিরিত রশ্মির ফ্রিকোয়েন্সির সমানুপাতিক। 

অর্থাৎ E∝ υ 

বা, E = hυ 

বা, E = nhυ 

এখানে E= কোয়ান্টাম শক্তি

h= প্লাংকের ধ্রুবক             

υ = বিকিরিত রশ্মির ফ্রিকোয়েন্সি 

n=1, 2, 3..... ইত্যাদি। 

 

২. বর্নালি কি ?

সূর্যের আলোর বিচ্ছুরনের ফলে বিভিন্ন বর্নের সমাবেশকে বর্নালি বলে। বর্নালি হলো তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরন। 

 

AD_4nXfD5kJvjhOJAEZXiso60H84c3jvzxXCxlZpfMWS0z7cUOOZ6MLvMvLbmYmrM92PrpC_SAxE_F0qJVSOV-zx224DaVC7FoKEVEOtBA2-6GoTzDncipCzEdOiElsthnCT6Bs8xOg3pg?key=sxMnPb-xD86CzutF9Z78Fhll

 

৩. তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরন (Electromagnetic radiation) :

তড়িৎ চৌম্বক বিকিরন হলো এক প্রকার শক্তি যা আলোর মত যে কোন মাধ্যম ছাড়া তরঙ্গ আকারে প্রবাহিত হতে পারে। পরস্পর সমকোন অবস্থিত একটি তড়িৎ ক্ষেত্র এবং একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের পারস্পারিক ক্রিয়ায় তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।

AD_4nXdHNcPxAxUE3_VjOry0eYbLjjhJHAstN3tCdViVhdlTinFM_5_qvciT0yzddqFC21z2g0rH4TgEk7wbSLR709buFJ3ASNJdl_UTTpew_UVrYaqGjvYyiCp9XdqCAirr1wTxvnTkpg?key=sxMnPb-xD86CzutF9Z78Fhll

তড়িৎ চৌম্বক বিকিরনগুলোকে তরঙ্গ দৈর্ঘের ভিত্তিতে পার্থক্য করা হয়। অতি বেগুনি এবং দৃশ্যমান অঞ্চল হলো তড়িৎ চৌম্বক বর্নালির অতিব গুরুত্বপূর্ন ও প্রয়োজনীয় বর্নালি অঞ্চল । সমগ্র তড়িৎ চৌম্বক বর্ণালিতে দৃশ্যমান অঞ্চল একটি অতি সামান্য অঞ্চল। আমরা এ অঞ্চলটি দেখতে পাই। 

AD_4nXe_tJCjqtFWyJaQn0A455ni7zOw4IbUKYpzcugSyqJnzBWh-ngybXreHSoVJxw7jf24BhTkzZdnhZDeCYqSiPBY3iS7wL01OCmsmt7P3Qd41nX2PCkvx3q1g0Em2q2tVnovb7n3?key=sxMnPb-xD86CzutF9Z78Fhll

মনে রাখা আবশ্যক যে, সব ধরনের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আলোর উৎপত্তি বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে হয় যা শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিতে চলে। এজন্য এ ধরনের আলোক একত্রে তড়িৎ চৌম্বকীয় বর্নালি হিসেবে পরিচিত। 

বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে প্রমান করেন যে, সব ধরনের দৃশ্যমান-অদৃশ্য আলোর উৎপত্তি বিদ্যুৎ ও চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে হয়। 

 

৪. জাল টাকার শনাক্তকরনে UV রশ্মির ব্যবহার :  

(১) টাকায় UV রশ্মির স্ক্যান করলে বৈশিষ্টমূলক বর্ন অর্থাৎ নির্দিষ্ট রঙ ও উজ্জলতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু জাল টাকায় এমনটি হয় না। 

(২) সাধারন আলোতে আসল এবং নকল উভয় টাকাতেই জলছাপ দেখা যায়।  UV ল্যাম্পের নিচে আসল টাকার জলছাপ স্পষ্ট দেখা যায় , কিন্তু  জাল টাকায় তা অস্পষ্ট দেখা যায়। 

(৩) প্রচলিত আসল টাকায় নকল প্রতিরোধে কিছু অদৃশ্যমান চিহ্ন থাকে। যা শুধুমাত্র UV রশ্মি শোষনের ফলে দৃশ্যমান হয় । জাল টাকায় এরূপ দৃশমান অস্তিত্ব নেই। 

(৪) টাকায় বিভিন্ন রঙের যে তন্তুময় অংশ থাকে, তা UV রশ্মির প্রভাবে সুস্পষ্ট হয়। কিন্তু জাল টাকায় UV স্ক্যান করলে বর্নগুলো সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। 

(৫) টাকায় বিভিন্ন রঙের যে নকশা করা থাকে তা UV রশ্মি শোষন করে পরিবর্তন করে। জাল টাকায় নকশার এরূপ বর্ন পরিবর্তন হয় না। 

৫. ফ্লোরোসেন্স পদার্থ কী? 

ফ্লোরোসেন্স পদার্থ : যে সকল পদার্থ UV অঞ্চলের 10-380 ন্যানোমিটার তড়ঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বিকিরন শোষন করে কিন্তু 380-780 ন্যানোমিটার তড়ঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দৃশ্যমান  বর্নালি বিকিরন করে, সে সকল পদার্থকে প্রতিপ্রভা পদার্থ বা ফ্লোরোসেন্স পদার্থ বলে। 

৬. প্রতিপ্রভা বলতে কী বুঝ?

যে সকল পদার্থ UV অঞ্চলের 10-380 ন্যানোমিটার তড়ঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বিকিরন শোষন করে কিন্তু 380-780 ন্যানোমিটার তড়ঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দৃশ্যমান  বর্নালি বিকিরন করে, সে সকল পদার্থকে প্রতিপ্রভা পদার্থ বা ফ্লোরোসেন্স পদার্থ বলে।  এভাবে, কোন ফ্লোরোসেন্স পদাথ কর্তৃক UV রশ্মি শোষন করে দৃশ্যমান আলো বিকিরনের প্রক্রিয়াকে প্রতিপ্রভা বলে।

এখানে উল্লেখ্য যে, উত্তেজক আলো যতক্ষন থাকে ততক্ষনই প্রতিপ্রভা ঘটে।

৭. অনুপ্রভা(Phosphorescence) :

শোষিত রশ্মির বিলম্বিত বিকিরনকে অনুপ্রভা বলে। কিছু অনু বা পরমানুর উপর UV রশ্মি নিক্ষেপ করার পর রশ্মির উৎস সরিয়ে নিলেও 0.0004s-10s বা তার বেশি সময় ধরে ঐ অনু বা পরমানু দৃশ্যমান আলো বিকিরন করে। এ ঘটনাকে অনুপ্রভা বলে। যেমন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম সালফাইড প্রভৃতি।

৮. UV-রশ্মি কী?

 UV-রশ্মি : 10-380 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরনকে অতিবেগুনি রশ্মি বা UV-রশ্মি  রশ্মি বলে।

 

৯. দৃশ্যমান আলো কী?

 দৃশ্যমান আলো : 380-780 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরনকে দৃশ্যমান আলো বলে।

১০. আলো কী?  

 আলো : আলো এক প্রকার তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরন। ইহা কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়া তরঙ্গ আকারে  অতি দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হতে পারে। 

AD_4nXeAcYHWCXbeDMmdQpVqDk1rBcm9GIjyrfy1No4Rtaz3Y7gFHM8WbK2EW1RBmuFDwbejRk26eiF_vwdz8PK7IFYOlwpH381v2xyMfyv27FAB0LW5Bw6bYdpXfoN5G4PnmeL7HEqTkw?key=sxMnPb-xD86CzutF9Z78Fhll

 

১১. হাইড্রোজেন বর্নালি (Hydrogen spectrum) : 

ডিসচার্জ নলে নিম্নচাপে হাইড্রোজেন গ্যাসে উচ্চ বিভব প্রয়োগ করলে গ্যাসটি থেকে উজ্জ্বল আলোকরশ্মির বিকিরন ঘটে । এ বিকীর্ন আলোকে বর্নালিবিক্ষনের প্রিজমের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করালে এটি কতিপয় উপাদানে বিশ্লিষ্ট হয়ে একটি বর্নালি গঠন করে। এ বর্নালিকে হাইড্রোজেন বর্নালি বলে। 

এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে ইলেকট্রনীয় ধাপান্তরের ফলে বর্নালিরেখাগুলো গঠিত হয়।   

AD_4nXfPOjPck_le9YQN2HjtzOhIrjw0usHx144JkP7t7yVpan8anRQ514ZfQTnh5HipoXhNRrZfzxpYs7sYSDrHh3ZB22i53C6qS8utMEYGEpCIZrBRRtAqnsJvdz7biip8Taahx_KE?key=sxMnPb-xD86CzutF9Z78Fhll       

হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বর্নালিরেখাগুলোকে তরঙ্গ দৈর্ঘের পরিসর অনুযায়ী ছয়টি বর্নালি সিরিজে শ্রেনিকরন করা হয়। 

ইলেকট্রনটি যখন উচ্চতর শক্তির (n2 = 2, 3, 4, 5....) থেকে নিম্নতম শক্তিস্তর (n1=1)-এ অবনমিত হয়, তখন লাইমেন সিরিজের উদ্ভব ঘটে।

অনুরূপভাবে, বামার, প্যাশন, ব্র্যাকেট,ফান্ড এবং হামফ্রিজ সিরিজগুলোর উদ্ভব হয়, যখন ইলেকট্রন উচ্চতর শক্তিস্তরর থেকে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ৬ষ্ঠ শক্তিস্তরে অবনমিত হয়।  

হাইড্রোজেন বর্নালিতে বর্নালি রেখাগুলোর তরঙ্গ সংখ্যা নিচে উল্লেখিত রিডবার্গের সমীকরন হতে গননা করা যায়, যা পরীক্ষালব্দ ফলাফলের অনুরূপ হয়। 

AD_4nXfVqwFKy8Mf3kyoPewuOPea-zikHcdYTPxx6S8_b8wVZFOD-A26jczTxPm7BafowY96bFuiRFKKtmKWsUK6XXk2yJ6kGrTaxW8EW_dP6_-FDMpbOLJA1FjEQRxniipN8kONUnvB?key=sxMnPb-xD86CzutF9Z78Fhll

১২. একটি ইলেকট্রন থাকা সত্বেও হাইড্রোজেনের পারমানবিক বর্নালিতে অনেকগুলো রেখা দেখা যায় কেন? ব্যাখ্যা কর।

 ব্যাখ্যা :  হাইড্রোজেন পরমানুতে ১টি মাত্র ইলেকট্রন বিদ্যমান যা স্বাভাবিক অবস্থায় ১ম শক্তিস্তরে অবস্থান করে। বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন গ্যাসকে তাপ বা বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা উত্তেজিত করলে ঐ ইলেকট্রন শক্তি শোষন করে উচ্চতর শক্তিস্তরে ধাপান্তরিত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পরমানুগুলি কর্তৃক শোষিত শক্তির পরিমান ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার ঐ ইলেকট্রনগুলি শক্তি বিকিরন করে উচ্চ শক্তিস্তর থেকে বিভিন্ন নি¤œ শক্তিস্তরে ফিরে আসে। এক্ষেত্রে বিকিরিত শক্তির পরিমানও ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় বর্নালিতে অনেকগুলো রেখার উদ্ভব ঘটে। তাই হাইড্রোজেন পরমানুতে একটি ইলেকট্রন থাকা সত্বেও এর পারমানবিক বর্নালিতে অনেকগুলো বর্নালি রেখা দেখা যায়।

১৩.  He+ এর ক্ষেত্রে বোর তত্ব প্রযোজ্য - ব্যাখ্যা কর।

বোর তত্ত্বের সাহায্যে যথার্থভাবে হাইড্রোজেনের পারমানবিক বর্নালী ব্যাখ্যা করা যায়। H - একটি এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট কনা। বোর তত্ত্ব অনুসারে, হাইড্রোজেন পরমানুর ইলেকট্রন কর্তৃক শক্তি শোষন বা বিকিরনের মাধ্যমে পারমানবিক বর্নালি সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, He+ ও একটি এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট কনা। এর একমাত্র ইলেকট্রন কর্তৃক শক্তি শোষন বা বিকিরনের মাধ্যমে হাইড্রোজেন পরমানুর অনুরূপ বর্নালি সৃষ্টি হয। তাই, He+ এর ক্ষেত্রে বোর তত্ব প্রযোজ্য।

AD_4nXdqysFIXMaCQGpYHG2HZ18C5Z6AMQbFAO-G9f6wgNGSvBi1f-baB6WiqcbTNfy9me1ZZFo-M_e8Vmot8Aj5dB8ewsi2g9K_wSzEIhe1BU5br4688Exq5Jw2RETmnA1FxCTQKsP8pQ?key=sxMnPb-xD86CzutF9Z78Fhll

*** তড়ঙ্গ বলবিদ্যা এবং হাইড্রোজেন বর্নালির গানিতিক সমস্যা :

 

 

A K M Ziaul Hasan

M Sc in Chemistry(1st class)

Assistant Professor,Department of Chemistry,

IDEAL COLLEGE,Dhanmondi, Dhaka

Gmail : Ziaul.hasan22@gmail.com

https://ziaulhasan.com

Mob. 01715-736525(7.0pm to 11.0pm)